
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ‘শিশুরাই রত্ন, করব যত্ন’— এই স্লোগানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার শেখানোর জন্য ‘আইসিবিসি’ প্রকল্প হাতে নেয়। নীলফামারী জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘লোকাল আইডিয়া ফর এম্পাওয়ারমেন্ট’ বা লাইভ (LIVE)। তবে এখন এই প্রকল্পটি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।
জেলা শিশু একাডেমি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাইভ এনজিওর বেশিরভাগ কার্যক্রমই অচল হয়ে পড়েছে। মাঠে কাজ প্রায় নেই বললেই চলে। অন্যদিকে এনজিও কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাহিদা পূরণ না করায় তাঁদের বিরুদ্ধে এমন নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রকল্পের সহকারী ব্যবস্থাপক মাদুল মিয়া জানান, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হয়েও তিনি অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। প্রকল্পের আওতায় জেলার ডিমলা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৫০০টি শিশু যত্ন কেন্দ্র এবং ৫০টি সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালুর কথা থাকলেও বাস্তবে বেশিরভাগই কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও এসব কেন্দ্রের খবর জানেন না।
সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই প্রকল্প সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না, কেউ কখনো জানায়ওনি।” অথচ নিয়ম অনুযায়ী, স্থানীয় গ্রাম ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে তাঁকে এসব বিষয়ে অবহিত করা উচিত ছিল। কিশোরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও প্রীতম সাহাও জানান, তাঁর উপজেলায় লাইভ এনজিওর কোনো প্রতিনিধি কখনো সমন্বয় সভায় উপস্থিত ছিলেন না, এমনকি তিনি তাদের কাজ সম্পর্কেও কিছু জানেন না।
অভিযোগ আছে, শিশু যত্নকারীদের নিয়মিত বেতন দেওয়া হচ্ছে না, নিয়োগে টাকার লেনদেন হচ্ছে, এমনকি প্রকল্পের এক কর্মকর্তার অনৈতিক আচরণের কারণে প্রকল্পের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার থেকে শিশুদের জন্য খেলনা দেওয়া হলেও, অনেক জায়গায় সেই খেলনা শিশুদের হাতে পৌঁছায়নি। কিছু যত্নকারী জানান, তাঁদের কেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই, ফ্যান নেই— গরমে শিশুরা আসতে চায় না। অনেকে বলেন, যত্ন কেন্দ্রের নামে টাকা তুলে এনজিও কর্মকর্তারা আত্মসাৎ করছেন।
জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তার মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি কেন্দ্র বাদে প্রায় সবকটি কেন্দ্র অচল। তবে তিনি অভিযোগ করেন, এনজিও কর্মকর্তারা তাকে ঘুষ দিতে চাননি বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে দোষারোপ করছেন। অন্যদিকে এনজিওর জেলা উপপরিচালক সুভাষ চন্দ্র পাল বলেন, বরাদ্দের টাকা সময়মতো না পাওয়ায় অনেক কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানিয়েছেন, অভিযোগগুলোর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে দেশের ১৬ জেলায় এই ‘আইসিবিসি’ প্রকল্প শুরু হয়, যার মধ্যে শুধু নীলফামারীতেই প্রতি বছর ৬ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়।