
বিশেষ প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রামের চন্দনাইশসহ বিভিন্ন উপজেলায় আলু চাষ থেকে লাভের মুখ দেখছেন না কৃষকরা। কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত কমতে থাকা দাম, বাড়তি উৎপাদন ও রোগবালাইয়ের কারণে হাজারো কৃষকের মাথায় হানা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। অনেকেই এখন কম জমিতে আলু চাষের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কেউ কেউ পুরোপুরি আলু চাষ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
চন্দনাইশ উপজেলার বাসিন্দা মো. উসমান গণী প্রায় ৩০ শতক জমিতে আলু চাষ করেছিলেন, যেখানে প্রতি শতকে গড়ে তিন মণ আলু পেয়েও লাভ করতে পারেননি। তিনি জানান, ‘রোগবালাই আর পোকার আক্রমণে অনেক আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এবার আমি মাত্র ৫ থেকে ৬ গন্ডা জমিতে আলু চাষ করব।’ উসমানের মতো চট্টগ্রামের শতাধিক কৃষকই আলু চাষে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘সর্বশেষ মৌসুমে দেশে আলুর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম পড়েছে। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাননি, তাই আলু চাষে আগ্রহ কমেছে। ফলস্বরূপ এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়নি।’
চট্টগ্রামে সাধারণত ডায়মন্ড, কার্ডিনাল ও দোহাজারীর স্থানীয় জাতের আলুর চাষ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলুতে সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হলো লেট ব্লাইট, যা গাছ শুকিয়ে ফেলায় উৎপাদন কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি আর্লি ব্লাইট, লিফ কার্ল ভাইরাস ও কাটুই পোকার আক্রমণে আলু মাঠে নষ্ট হয়।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, দেশি লাল আলুর চাষ ক্রমশ কমছে। ভাইরাসজনিত কারণে গাছ দুর্বল হয়ে কন্দ ছোট হওয়ায় বাজারে দামও কম। ফলে অনেক কৃষক বিদেশি বা উন্নত জাতের আলুর দিকে ঝুঁকছেন।
চন্দনাইশের কৃষক আবু মুছা বলেন, ‘এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ে ২০ থেকে ২২ টাকা, কিন্তু গতবার সেই দামে বিক্রি করতে পারিনি। তাই এবার আর আলু চাষ করব না।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে আলুর আবাদ ২১ শতাংশ ও উৎপাদন ২৮ শতাংশ কমেছে। জেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, ‘একই জাতের বীজ বারবার ব্যবহার এবং অপরিপক্ব বীজ ব্যবহারের কারণে ফলন কমছে ও রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ছে।’
চট্টগ্রামের কৃষকরা আশা করছেন, সরকার বীজের গুণগত মান উন্নয়ন ও রোগ প্রতিরোধে সহায়তা প্রদান করবে, যাতে তারা আবার লাভজনকভাবে আলু চাষ করতে পারে।