
চট্টগ্রাম প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাবেক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনসহ চারজনের বিরুদ্ধে প্রায় ২৪ কোটি টাকার দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আরও তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
দুদকের তদন্তে দেখা গেছে, চসিকের পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে সাইফুদ্দিন দায়িত্বে থাকাকালে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ‘মেসার্স রানা বিল্ডার্স’ এবং ‘মেসার্স রানা বিল্ডার্স–ছালেহ আহমদ (জেভি)’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ সুবিধা দেন। প্রকল্পের অর্থ ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবিএল) কুমিল্লা শাখা থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হলেও, নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের নির্দিষ্ট হিসাবে অর্থ জমা না দিয়ে সাইফুদ্দিন সরাসরি ঠিকাদারদের নামে প্রায় ২৫ কোটি টাকার চেক ইস্যু করেন। টাকা পাওয়ার পর ঠিকাদার কাজ অসম্পূর্ণ রেখে উধাও হয়ে যায়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে থাকে এবং সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।
তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, সাইফুদ্দিন শুধু এই প্রকল্পেই নয়, অন্য ক্ষেত্রেও আর্থিক অনিয়ম করেছেন। তিনি ঠিকাদারদের বিল থেকে কেটে নেওয়া ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ভ্যাট ও আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও নির্দিষ্ট হিসাবে জমা দেননি।
দীর্ঘ তদন্তের পর চসিক ২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে। অভিযোগের সত্যতা মেলে এবং পরবর্তী সময়ে বিভাগীয় মামলা হয় (নম্বর ১/২০২১)। ২০১৮–২০২০ অর্থবছরে ঠিকাদার ও সরবরাহকারীদের বিলের বিপরীতে কেটে নেওয়া ভ্যাট ও কর জমা না দেওয়ার প্রমাণও মেলে। এরপর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
চার্জশিটে সাইফুদ্দিন ছাড়াও আরও তিনজনের নাম রয়েছে— মো. জাকির হোসেন, কুমিল্লার ব্যবসায়ী ও মেসার্স জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক; মো. সরোয়ার আলম, ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক শাখা প্রধান (বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত); এবং মো. তোফায়েল, এনআরবি ব্যাংকের কুমিল্লা শাখার এভিপি ও প্রধান। তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক জালিয়াতি, অসৎ উদ্দেশ্যে ঋণ অনুমোদন ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০২২ সালের ১০ মে দুদকের উপপরিচালক মো. আনোয়ারুল হক এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেন। প্রথম চার্জশিটে আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলে, তদন্ত কর্মকর্তা মো. বেনজীর আহমদ নতুন প্রমাণ যুক্ত করে পুনরায় চার্জশিট জমা দেন।
পরে সাইফুদ্দিন উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করলে আদালত তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। আত্মসমর্পণের পর তিনি জামিন পান। চার্জশিট গ্রহণের বিষয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি হবে।