ছাত্রলীগের সাবেক নেতা থেকে গণপূর্তের প্রভাবশালী প্রকৌশলী: হারুন অর রশিদকে ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের হাওয়া যেখানে দেশের বিভিন্ন দপ্তরে পরিবর্তনের বার্তা এনেছে, সেখানে গণপূর্ত অধিদপ্তরে চলছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের নিয়ন্ত্রণে এখনও দৃঢ়ভাবে টিকে আছে পুরোনো আওয়ামীপন্থি সিন্ডিকেট। তারই ছত্রছায়ায় সম্প্রতি রাজশাহী থেকে নারায়ণগঞ্জে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে যোগ দিয়েছেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হারুন অর রশিদ—যাকে ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন ও সমালোচনা।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তর যেন ব্যতিক্রম। অভিযোগ রয়েছে, শামীম আখতার নিজের ঘনিষ্ঠ ও আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের টিকিয়ে রাখার কৌশল নিয়েছেন। কয়েকজন কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেখানো পদক্ষেপ নিলেও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আহসান হাবিব ও হারুন অর রশিদকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসানো হয়েছে। এতে অধিদপ্তরের ভেতরে ঠিকাদার থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
হারুন অর রশিদের নিয়োগের পেছনে রয়েছে আরও বিতর্ক। জানা গেছে, তার স্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান Adroit Consultants and Engineers–এর নামে কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন তিনি নিজেই। তথ্য অনুযায়ী, গত ১১ মাসে আতিক সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় ২১টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১০.৬৬ কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন হারুন। এসবের মধ্যে রয়েছে রিপেয়ার, সংস্কার ও বড় বাজেটের নির্মাণ প্রকল্প। এমনকি চলতি বছরের মার্চ মাসে আহ্বান করা ছয়টি টেন্ডারের সবকটিই গেছে আতিকের প্রতিষ্ঠানের দখলে।
রাজশাহীতে দায়িত্বকালেও হারুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। টেন্ডার আহ্বানের আগেই কাজ শুরু করানোর মতো গুরুতর অনিয়ম প্রকাশ্যে এসেছিল, কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও স্পষ্ট—ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, আওয়ামী প্রার্থীদের প্রকাশ্য সমর্থন, এমনকি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সক্রিয় সদস্যপদ তাকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখছে এখনো।
অভিযোগ রয়েছে, নারায়ণগঞ্জে হারুন অর রশিদের পদায়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল আতিক সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষা করা। ইতোমধ্যেই ওই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার যাচ্ছে। প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার, ঠিকাদার আতিকুল ইসলাম আতিক ও তাদের সহযোগীদের নেতৃত্বে এই চক্র এখন গণপূর্ত অধিদপ্তরকে পরিণত করেছে এক ‘দুর্নীতির অভয়ারণ্যে’। বদলি বাণিজ্য থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি ও অর্থপাচার—সবকিছুতেই তারা অঢেল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সামনেই এসব অনিয়ম চলছে। তবে তিনি বিষয়গুলো জানেন কিনা, নাকি উপেক্ষা করছেন—সে প্রশ্ন এখন অনেকের মনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শামীম আখতার ও তার সিন্ডিকেট এখনও বিশ্বাস করছে শেখ হাসিনা ফিরবেন ক্ষমতায়, তাই প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোয় নিজেদের বিশ্বস্ত লোকদের বসিয়ে রাখছে। এর ফলে সরকারের সংস্কার কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, আর দুর্নীতির সংস্কৃতি টিকে যাচ্ছে আগের মতোই।