
ঝিনাইদহ প্রতিবেদকঃ ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে টেন্ডার জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার কাজের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রেখে তিনি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। এ নিয়ে মেসার্স সালেহ অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন আহমেদ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বৃহৎ প্রকল্প রেজিলিয়েন্ট আরবান অ্যান্ড টেরিটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (আরইউটিডিপি) আওতায় গত ১ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ পৌরসভা প্রায় ২০ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে। টেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত তিনটি পুরোনো পাকা সড়কে প্রচুর স্যালভেজ (ইট-বালি-খোয়া) থাকলেও এর মূল্য সম্ভাব্য খরচ থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, নথিপত্রে নানা অসঙ্গতি রেখে পরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত খরচ দেখানো হয়েছে, যা দুর্নীতির ইঙ্গিত বহন করে।
ভাষাসৈনিক মুসা মিয়া সড়ক, নতুন হাটখোলা সড়ক ও প্রিন্সিপাল করিমুদ্দিন সড়ক—এই তিনটি সড়কে রয়েছে কোটি টাকার স্যালভেজ। কিন্তু টেন্ডারে তা গোপন রাখা হয়েছে। যেমন, মুসা মিয়া সড়কের দৈর্ঘ্য ২,৫৩৭ মিটার দেখানো হলেও এখানে বিদ্যমান ২০ ইঞ্চিরও বেশি স্যালভেজের মূল্য টেন্ডারে ধরা হয়নি। আবার ৩৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর নামে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ভুয়া খরচ দেখানো হয়েছে, যদিও সরেজমিনে দেখা গেছে—খুঁটিগুলো সরানোর প্রয়োজন নেই।
একইভাবে, নতুন হাটখোলা সড়ক ও করিমুদ্দিন সড়কের ক্ষেত্রেও পুরোনো রাস্তা থাকা সত্ত্বেও নতুন করে স্যান্ডফিলিং, ম্যাকাডম ও আরসিসি ঢালাইয়ের খরচ ধরা হয়েছে। ফলে অল্প দৈর্ঘ্যের এসব সড়কে অস্বাভাবিক পরিমাণ সম্ভাব্য ব্যয় দেখানো হয়েছে। শুধু খুঁটি সরানোর খাতে করিমুদ্দিন সড়কে ভুয়া বিল ধরা হয়েছে ১৬ লাখ টাকারও বেশি।
এ ছাড়া মাত্র ১,৩০০ মিটার পুরোনো ড্রেন নির্মাণের খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা, যদিও পুরোনো ড্রেন আংশিক সংস্কার করলেই তা ব্যবহারযোগ্য ছিল। রাস্তার লাইটিংয়ের কাজেও অতিরিক্ত ব্যয়ের হিসাব যোগ করে সম্ভাব্য খরচ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগকারী সালাউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন তার পছন্দের ঠিকাদারদের টেন্ডারে সুযোগ দিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছেন। মেয়র ও কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতায় তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন—যার মধ্যে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও ঢাকায় রয়েছে একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট।
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন জানান, “অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এখনো কোনো ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়নি।” অন্যদিকে পৌরসভার প্রশাসক রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, “দুদকের তদন্ত চলছে, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।”
চলমান এই অভিযোগে ঝিনাইদহের স্থানীয় ঠিকাদার ও নাগরিক সমাজে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। সবাই দুদকের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।