
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইতিহাস গড়ে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করেছে। এই সময়ে মোট রাজস্ব আদায় দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, যা দেশের ইতিহাসে কোনও অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সর্বাধিক। গত বছর একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৭৫ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ফলে এক বছরে রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২১ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি রাজস্ব এসেছে মূল্য সংযোজন কর বা মূসক খাত থেকে। এ খাতে আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডিজিটাল ভ্যাট ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধির কারণে মূসক আদায় দ্রুত বাড়ছে।
আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতেও ভালো প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাতে আদায় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি, রিটার্ন জমা দেওয়ার হার বেড়ে যাওয়া এবং কর ফাঁকি রোধে কঠোর মনিটরিংয়ের কারণে এই সাফল্য এসেছে বলে এনবিআর জানিয়েছে।
আমদানি ও রফতানি খাতেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৭ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। অর্থনীতিবিদদের মতে, বৈদেশিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা ও ডলার বাজারে স্বস্তি ফেরায় এই উন্নতি হয়েছে।
এনবিআর বলেছে, তিনটি প্রধান খাতেই (মূসক, আয়কর ও আমদানি-রফতানি) নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। সংস্থাটির দাবি, কর প্রশাসনের সংস্কার, ফাঁকি রোধ, করের আওতা বৃদ্ধি এবং মাঠ পর্যায়ে কঠোর তদারকির ফলেই এই ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি এসেছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানিয়েছে, রাজস্ব বৃদ্ধির এই ধারা বজায় রাখতে কর ফাঁকি প্রতিরোধ, কর পরিপালন নিশ্চিত করা এবং বকেয়া রাজস্ব পুনরুদ্ধারে কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সাফল্য যদি টেকসই হয়, তবে বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকারের আর্থিক সক্ষমতা আরও বাড়বে। তবে তারা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে জনগণের মধ্যে কর পরিপালনের সংস্কৃতি গড়ে তোলাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।