
বিশেষ প্রতিবেদকঃ যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মত্ত বিশ্ব। তাই যুদ্ধ ব্যয়ও এখন আলোচনার বিষয়। যুদ্ধ প্রযুক্তিতে যে যতো এগিয়ে, তাকেই ধরা হয় মহাশক্তিধর। তবে শক্তির অর্জনের এই পথ আসে কারি কারি অর্থ বিসর্জনের পথ বেয়ে।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শত্রুর দেশে বোমাবর্ষণ সহজ কিছু নয়। এ ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় জ্বালানি নেয়া। অনেক ক্ষেত্রে জ্বালানি নিতে অন্য কোনো দেশে নামার সুযোগ না পেলে আকাশকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিতে হয়। আর মাঝ আকাশে জ্বালানি ভরার এই কাজটি খুব ব্যয়সাধ্য। এই ব্যয় শুনলে অনেকের কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য।
আধুনিক যুদ্ধ বিমানে মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার সুবিধা থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াটির নাম ‘মিড এয়ার রি-ফুয়েলিং’।
মাঝ-আকাশে ফাইটার জেটে তেল ভরার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় একটি ট্যাঙ্কার বিমানের। হাতিয়ার বোঝাই যুদ্ধবিমানের আশপাশে উড়বে সেটি। জ্বালানি ভরতে হলে প্রথমে জেটের পাইলট ট্যাঙ্কার বিমানটির চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তিনি অনুমতি দিলে ট্যাঙ্কার বিমানটি থেকে বেরিয়ে আসবে একটি তেল ভরার পাইপ। এর পর জেটের সামনে বা পিঠের উপরে থাকা উঁচু কঞ্চির মতো অংশে গিয়ে আটকে যাবে ওই পাইপ। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে তেল সরবরাহ।
যুদ্ধবিমানের জ্বালানির দাম গ্যালন প্রতি চার থেকে সাত হাজার ডলার। মাঝ-আকাশে তেল ভরলে সেই খরচ বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ। এ ক্ষেত্রে আবার যুদ্ধবিমান ভেদে ব্যয়ের হিসাবের তারতম্য রয়েছে। জনপ্রিয় মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকনে ‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’ করতে হলে চার থেকে ১৪ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। জেটটি কত পরিমাণ তেল নিচ্ছে, তার উপর ব্যয়ের সূচক নির্ভর করবে।
‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় খরচ হল ট্যাঙ্কার বিমান পরিচালনা এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ। সংশ্লিষ্ট বিমান কিনতেই সংশ্লিষ্ট বিমানবাহিনীকে ব্যয় করতে হবে কয়েক লক্ষ ডলার। প্রশিক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ বাদ দিলে একটি ট্যাঙ্কার বিমানের পিছনে ৫০ থেকে ৭০ লক্ষ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে। তবে অভিযান ভেদে মাঝ-আকাশে জ্বালানি ভরার প্রক্রিয়ায় ব্যয়ের হিসাব কম বা বেশি হতে পারে।
চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের গোপন আস্তানা লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। সংশ্লিষ্ট অভিযানটির পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন সামিট অফ ফায়ার’। এতে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ শ্রেণির ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ জেট থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে ইসরায়েল। তার জন্য যুদ্ধবিমান নিয়ে প্রায় ২,২০০ কিলোমিটারের বেশি রাস্তা পাড়ি দিতে হয়েছিল তাঁদের।
একই কথা মার্কিন বিমানবাহিনীর ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। গত জুনে এই অভিযানের মাধ্যমে ইরানের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রকে একরকম উড়িয়ে দেয় তারা। সংশ্লিষ্ট অভিযানে বাঙ্কার বাস্টার বোমা ব্যবহার করেছিল আমেরিকা। এর জন্য কৌশলগত বোমারু বিমান বি-২ স্পিরিটকে যুদ্ধের ময়দানে নামায় ওয়াশিংটন। প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার উড়ে এসে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছিল তারা।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এই ধরনের অভিযানে অন্তত দুই বার সংশ্লিষ্ট জেট বা কৌশলগত বোমারু বিমানে তেল ভরার প্রয়োজন হতে পারে। সেই মতো হিসাব কষে যোদ্ধা পাইলটদের সঙ্গে ট্যাঙ্কার বিমান পাঠানো হয়েছিল। সূত্রের খবর, জর্ডানের আকাশে লড়াকু জেটে জ্বালানি ভরে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য আরব সাগরের উপরের আকাশকে বেছে নিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে।
সাবেক সেনাকর্তাদের কথায়, সংশ্লিষ্ট অভিযানগুলিতে মাঝ-আকাশে এক বার জ্বালানি ভরতে আট থেকে ২৮ হাজার ডলার পর্যন্ত খরচ করেছে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী। তাদের অনুমান, দু’টি ক্ষেত্রেই অন্তত দুই বার ‘মিড এয়ার রিফুয়েলিং’ করেছে এফ-৩৫ এবং বি-২ স্পিরিট যুদ্ধবিমান। অর্থাৎ শুধুমাত্র জ্বালানি ভরতে ১৬ থেকে ৫৬ হাজার ডলার ব্যয় করছে ইসরায়েল এবং আমেরিকা।