
লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটে রোপা-আমন ক্ষেতে মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ করেছে। এতে ধানের ফলন নিয়ে কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তারা বলছেন, এমন বিপদ মুহূর্তেও কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীরা মাঠে আসছেন না। ওষুধ ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না।
কৃষকেরা বলছেন, কিছুদিন পর গাছে ধান আসার কথা। এ অবস্থায় পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ করেও ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ৮৬ হাজার ৬ শত ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ইতিমধ্যে ৮৫ হাজার ৩ শত ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষাবাদ হয়েছে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে এ ধানের চারা রোপণ করা হয় এবং অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে ধান কাটা হবে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রোপা-আমন ধানের ক্ষেতে মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে। এ সব পোকা কাণ্ডের ভেতরে থেকে খাওয়া শুরু করে। ধানের চারার পাতা ছিদ্র হয়ে বাদামি রং ধারণ করছে। মোগলহাট ইউনিয়নে পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণও লক্ষ করা গেছে। পাতা মোড়ানো পোকা লম্বালম্বি ভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাতায় সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে যাওয়ার মতো দেখায়। মোগলহাট ইউনিয়নের কৃষক কমল কান্তি বর্মন, মো. রবিউল ইসলাম, হরিপদ রায় হরি বলেন, এবার জমিতে রোপা-আমন রোপণ করেছেন। মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণে তারা এখন দিশেহারা । কীটনাশক ছিটিয়েও এ পোকা দমন করা যাচ্ছে না। এক বিঘা জমিতে এক দফা কীটনাশক প্রয়োগে ব্যয় হচ্ছে ৫ শত টাকা। ফলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। ফলন ভালো না হলে কী করবেন, বুঝতে পারছেন না। ফুলগাছ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব বলেন, এ সময়ে মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকার কিছু আক্রমণ হয়। কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কালিগঞ্জ উপজেলার শিয়াল খোওয়া গ্রামের চাষী হাসিম, শাহ আলী, আব্দুস সালাম ও আবু সাঈদ জানান, তাদের ১৬ বিঘা জমিতে মাজরা পোকা ও পাতা মোড়ানো রোগ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। এসব চাষী ধানের ফলন নিয়ে বড় দুচিন্তায় রয়েছেন। কৃষি বিভাগের কোন মাঠ পর্যায়ের কর্মী আসেননি নেই। দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, লালমনিরহাট জেলার ৫ টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫ টি ইউনিয়ন ও ২টি (লালমনিরহাট, পাটগ্রাম) পৌরসভায় খরিপ টু মৌসুমে ৮৬ হাজার ৬ শত ৫০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ লক্ষ ৮৬ হাজার মে.টন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এবারও ছাড়িয়ে যাবে।