
বিশেষ প্রতিবেদকঃ হার্ট অ্যাটাক শব্দটা শুনলেই অনেকের মনে পড়ে বুকে প্রচণ্ড ব্যথার দৃশ্য। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সব হার্ট অ্যাটাকেই বুকে ব্যথা হবে এমন নয়। অনেক সময় হৃদ্রোগের আক্রমণ ঘটে যায় নীরবে—যাকে বলা হয় সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক। এই ধরনের হার্ট অ্যাটাকে দেখা দিতে পারে একেবারে ভিন্ন ধরনের উপসর্গ, যেগুলো অনেকেই অবহেলা করেন কিংবা সাধারণ ক্লান্তি, অ্যাসিডিটি বা হজমের সমস্যার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন।
যেসব উপসর্গ হার্ট অ্যাটাকের ইঙ্গিত দিতে পারে:
অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা:
অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া বা হঠাৎ শক্তি কমে যাওয়া হার্টে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। নারীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
বমি ভাব বা হজমের সমস্যা:
বুকে ব্যথা না থাকলেও অনেক সময় বমি ভাব, বুক জ্বালা বা পেটে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। এটি অ্যাসিডিটির লক্ষণ মনে হলেও, হার্ট অ্যাটাকের আগাম সংকেত হতে পারে।
ঠান্ডা ঘাম:
মাথা ঘোরা ও ঠান্ডা ঘাম হওয়া হার্ট অ্যাটাকের সময় দেখা দিতে পারে। এটি হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপের ফলেও হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট:
বিশ্রামের সময় বা হালকা পরিশ্রমেই শ্বাস নিতে সমস্যা হলে, তা হার্টে রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার লক্ষণ হতে পারে।
চোয়াল, ঘাড়, পিঠ বা বাহুতে ব্যথা:
বিশেষ করে বাম বাহুতে বা পিঠে ব্যথা ছড়িয়ে পড়া অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হয়ে থাকে।
হালকা মাথা ঘোরা বা ঝিমঝিম ভাব:
রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছানোর কারণে মাথা ঝিমঝিম করতে পারে।
বিশেষ ঝুঁকিতে কারা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা অনেক সময় বুকে ব্যথা অনুভব না করেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। তাছাড়া, যাদের উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বেড়ে গেছে, ধূমপান করেন, স্থূলতা রয়েছে বা পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস আছে—তাদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
করণীয় কী?
এই উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা উচিত। সময়মতো ইসিজি, ট্রোপোনিন টেস্ট, এবং প্রয়োজনে ইকোকার্ডিওগ্রাম বা এনজিওগ্রাফি করানো যেতে পারে। দেরি হলে হার্টের স্থায়ী ক্ষতি এমনকি মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের এক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন,“হার্ট অ্যাটাক মানেই যে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হবে, তা নয়। অনেক রোগী হজমের সমস্যার মতো উপসর্গ নিয়ে আসেন, পরে দেখা যায় সেটা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক।”
জীবন বাঁচাতে শরীরের ছোট ছোট সংকেতগুলোকে অবহেলা করা যাবে না। বিশেষ করে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং সচেতন থাকা জরুরি। মনে রাখা প্রয়োজন—হার্ট অ্যাটাক নীরবও হতে পারে, তবে তার পরিণতি হতে পারে প্রাণঘাতী।