
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের কিশোর সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক ও ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের স্রষ্টা রকিব হাসান আর নেই।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকার ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মূর সামাজিক মাধ্যমে জানান,“আজ বিকেলে কিডনির ডায়ালাইসিস চলাকালীন সময়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান।”
দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতা ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন রকিব হাসান। জানা গেছে, তাঁর দু’টি কিডনিই বিকল হয়ে গিয়েছিল।
কিশোর সাহিত্যের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্ম গ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তাঁর শৈশব কাটে ফেনীতে। পড়াশোনা করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে।
লেখালেখির জগতে তাঁর যাত্রা শুরু হয় সেবা প্রকাশনী থেকে।
প্রথমদিকে বিশ্বসাহিত্যের ক্লাসিক বই অনুবাদ করে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর তিনি লেখেন টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক বই। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পান তিন গোয়েন্দা সিরিজের মাধ্যমে।
তিন গোয়েন্দার জন্মদাতা
মূলত রবার্ট আর্থারের “থ্রি ইনভেস্টিগেটরস” সিরিজ অবলম্বনে ‘তিন গোয়েন্দা’ শুরু হলেও, রকিব হাসানের উপস্থাপনভঙ্গি ও ভাষা এই সিরিজকে বাংলাদেশি কিশোরদের নিকট নতুন একমাত্রা দেয়।
জয়-রবিন-মুসা নামের তিন কিশোর চরিত্র দিয়ে গড়া এই সিরিজ বাংলাদেশি কিশোর পাঠকদের কালজয়ী বন্ধুতে পরিণত হয়।
তাঁর লেখনির মাধ্যমে রহস্য, রোমাঞ্চ ও কল্পনার জগতে প্রবেশের এক অনন্য পথ খুঁজে পায় প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
রচনাশৈলী ও ছদ্মনাম
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি রকিব হাসান ‘শামসুদ্দীন নওয়াব’ ছদ্মনামেও লিখেছেন। এই নামে তিনি জুল ভার্নের জনপ্রিয় বিজ্ঞান কল্পকাহিনিগুলো অনুবাদ করেন।
স্মরণে
রকিব হাসানের মৃত্যুতে কিশোর সাহিত্যাঙ্গনে এক শূন্যতা তৈরি হলো, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
সাহিত্যের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, ভাষার সুরে কিশোর মন ছোঁয়ার ক্ষমতা এবং কল্পনার রাজ্য নির্মাণে তাঁর দক্ষতা তাঁকে অমর করে রাখবে পাঠকের মনে।