
এসএম বদরুল আলমঃ গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ কায়কোবাদ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ ঢাকতে আবারও সক্রিয় হয়েছেন। সম্প্রতি “তথ্য সন্ত্রাসের কবলে গণপূর্ত অধিদপ্তর” শিরোনামে একটি বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশ করে তিনি নিজেকে নিরপরাধ ও উন্নয়নবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রতিবেদনটি আসলে কায়কোবাদ-নিয়ন্ত্রিত এক সিন্ডিকেটের তৈরি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোহন, আলী আকবর ও নিজাম উদ্দীন দরবেশ — যারা সাংবাদিক সেজে ভুয়া প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।
গণপূর্তের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, কায়কোবাদ ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ঠিকাদার নিজেদের ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে কিছু নামসর্বস্ব অনলাইন ও সাপ্তাহিক পত্রিকা ব্যবহার করে নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করতে মাঠে নেমেছেন। “তথ্য সন্ত্রাসের কবলে” নামের প্রতিবেদনটি আসলে কায়কোবাদ নিজেই স্পনসর করেছেন, যাতে দুর্নীতির তদন্ত থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া যায়। প্রতিবেদনে নাটকীয় শব্দ ব্যবহার করে প্রকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ‘তথ্য সন্ত্রাসী’ হিসেবে উপস্থাপন করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, কায়কোবাদ বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির লক্ষ্যে প্রায় ১০ কোটি টাকার অবৈধ ফান্ড গঠন করেছেন। এই অর্থ ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে তার ঘনিষ্ঠ মোহন-আলী আকবর-নিজাম দরবেশের প্রোপাগান্ডা টিম। তাদের কাজ—দুর্নীতির খবর প্রকাশ হলে তা “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে প্রচার করা এবং পেইড নিউজ হিসেবে পাল্টা সংবাদ ছাপানো।
প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শামীম আখতারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে কায়কোবাদ দীর্ঘদিন ধরে ই/এম বিভাগের বিভিন্ন টেন্ডারের কমিশন বণ্টনের কেন্দ্রীয় রুট নিয়ন্ত্রণ করছেন। তদন্তে দেখা গেছে, তার নেতৃত্বাধীন ইএম সার্কেল-২ এর অধিকাংশ নির্বাহী প্রকৌশলীই কমিশন নির্ভর কাজের সঙ্গে যুক্ত।
এই সিন্ডিকেটে রয়েছেন কথিত সাংবাদিক ও ঠিকাদার মোহন (কায়কোবাদের আত্মীয়), মিলেনিয়াম ট্রেডার্সের মালিক আলী আকবর, ভুয়া সাংবাদিক নিজাম উদ্দীন দরবেশ, এবং কায়কোবাদের ঘনিষ্ঠ হালিম ও আতিকসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা সবাই একদিকে ঠিকাদারি করেন, অন্যদিকে সাংবাদিক পরিচয়ে কায়কোবাদের দুর্নীতিকে আড়াল করার প্রচারণা চালান।
ইতিপূর্বে লিফট দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৌশলী হালিমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কোনো শাস্তি হয়নি। একইভাবে “Adroit Consultants and Engineers” এর মাধ্যমে আতিকের ১৪০ কোটি টাকার লুটপাটের খবরও ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
বহু বছরের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, কায়কোবাদ ইএম ডিভিশন-৭, সার্কেল-১ ও চট্টগ্রাম সার্কেলে দায়িত্বে থাকাকালে ভুয়া প্রাক্কলনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মুজিববর্ষ প্রকল্পের ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা তার নিয়ন্ত্রণে গিয়েছিল। মুগদা মেডিকেল কলেজ ও মিরপুর সরকারি আবাসিক ভবনের মতো প্রকল্পে বিল তোলার পরও কাজ সম্পন্ন হয়নি। এমনকি রাজধানী ও শেরপুরে তার পরিবারের নামে বিপুল পরিমাণ অঘোষিত সম্পদেরও সন্ধান মিলেছে।
এদিকে, কায়কোবাদ সিন্ডিকেট এখন প্রকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। যেসব গণমাধ্যম তার দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে, তাদের ফোন ও অনলাইনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। “তথ্য সন্ত্রাস” শব্দ ব্যবহার করে কায়কোবাদ এখন উল্টো সাংবাদিকদের অভিযুক্ত করতে চাইছেন। কিন্তু গণপূর্তের অনেক কর্মকর্তা বলছেন, আসল “তথ্য সন্ত্রাস” হলো তথ্য গোপন করা—আর সেটাই কায়কোবাদের সিন্ডিকেটের মূল কাজ।
সচেতন মহল মনে করে, কায়কোবাদের মতো বিতর্কিত কর্মকর্তা ও তার সহযোগী ঠিকাদার-সাংবাদিক চক্রকে এখনই দুদক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্তের আওতায় আনা উচিত। তাদের সম্পদ, টেন্ডার কমিশন বণ্টন এবং পেইড নিউজের উৎস উদঘাটন করা সময়ের দাবি।
গণমাধ্যমের দায়িত্ব সত্য প্রকাশ করা, আড়াল করা নয়—কারণ “তথ্য সন্ত্রাস” নয়, গণপূর্ত অধিদপ্তর এখন দুর্নীতি সন্ত্রাসের কবলে। সত্য প্রকাশ থামানো যাবে না—এটাই গণমাধ্যমের অঙ্গীকার।