ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

এসএম বদরুল আলমঃ ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং অর্থপাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৯ অক্টোবর থেকে এ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয় বলে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
দুদকের নথি অনুযায়ী, শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার লেনদেন, জাহাজ ভাঙার ব্যবসায় এলসি জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিদেশে শেল কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তদন্ত শুরু করেছে দুদক।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর শওকত আলী চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা পড়ে। এর পর বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) তার ও পরিবারের সদস্যদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে। বিএফআইইউ জানায়, তাদের নামে দেশে ১৮৭টি ব্যক্তিগত ও ১৪৬টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব রয়েছে, যেখানে মোট লেনদেনের পরিমাণ ৮ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার বেশি।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শওকত আলী চৌধুরীর ঢাকা ব্যাংকের একটি হিসাবেই জমা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। তদন্তে কর ফাঁকি ও অর্থপাচারের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তার ব্যক্তিগত ইবিএল হিসাব থেকে কোম্পানির সেক্রেটারি মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ১২৫ বার নগদ অর্থ উত্তোলন করেছেন। কন্যা জারা নামরীনের এক মাসের লেনদেনই ছিল ৩১ কোটি টাকার বেশি, যা তার আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। একইভাবে ছেলে জারান আলীর ব্যাংক হিসাবেও অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে।
এছাড়া, ২০১২ সাল থেকে জাহাজ ভাঙার ব্যবসায় ১৪১টি এলসি খুলেছেন শওকত আলী চৌধুরী, যার মধ্যে ১১টির ক্ষেত্রে আমদানিকৃত ভেসেল কখনো চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেনি। তদন্তে দেখা গেছে, এসব এলসির সুবিধাভোগী ছিল ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নিবন্ধিত তিনটি শেল কোম্পানি, যেগুলোর অস্তিত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
তদন্ত নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শওকত আলী চৌধুরী রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ জে এম নাসির, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস আলাউদ্দিন নাসিম, ব্যবসায়ী নাফিস শারাফাত ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। আরজেএসসি রেকর্ড অনুযায়ী, সিডিনেট কমিউনিকেশন লিমিটেডে তাদের যৌথ মালিকানা রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শওকত আলী চৌধুরী বিদেশেও অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সিঙ্গাপুরে তার নামে দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যার একটি সম্প্রতি তিনি বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে।
আইনজীবী কামরুল ইসলাম দুদক চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলেন, হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের এ ঘটনা দেশের জন্য ভয়াবহ। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে অন্যরা একই ধরনের অপরাধে উৎসাহিত হবে।