
এসএম বদরুল আলমঃ গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলামকে ঘিরে উঠেছে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। জানা গেছে, তিনি গোপনে দরপত্রের তথ্য ফাঁস করে আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সরকারি কাজ পাইয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে যোগ্য ঠিকাদাররা বঞ্চিত হচ্ছেন এবং ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। গণপূর্ত বিভাগের বড় বড় কর্মকর্তাদের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় এখনো টিকে আছেন এই রাশেদুল।
কয়েকজন ঠিকাদারের সঙ্গে আগে থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী হওয়ার পর সেই সিন্ডিকেটই যেন পুরো অফিস দখল করে ফেলেছে। অফিসে প্রায়ই দেখা যায় তাঁর আত্মীয় ও পরিচিত ঠিকাদারদের আড্ডা।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর গণপূর্ত বিভাগ-১ বিভিন্ন সরকারি ভবনের সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রাশেদুল ইসলাম টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই আত্মীয় ও বন্ধুদের মধ্যে কাজ ভাগ করে দিচ্ছেন।
উদাহরণস্বরূপ, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভবনের সংস্কারকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাশেদুলের স্ত্রীর চাচাতো ভাই মো. রফিককে। এছাড়া রফিক গণপূর্ত অফিসের আরও দুটি কাজ করছেন। একইভাবে তাঁর আত্মীয় ফয়সাল কবিরকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সংস্কারকাজ এবং বন্ধু ইয়াসির আরাফাতকে সার্কিট হাউস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংস্কারকাজ দেওয়ার কথা শোনা গেছে। অথচ এসব ঠিকাদারের আগে তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না।
এ বিষয়ে এক বঞ্চিত ঠিকাদার বলেন, “নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী আসার পর যোগ্য ঠিকাদারেরা কাজ পাচ্ছেন না, আর অযোগ্য আত্মীয়স্বজন কাজের সুযোগ পাচ্ছেন।”
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাশেদুল ইসলামের অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর আত্মীয় ঠিকাদার রফিক সেখানে বসে আছেন। সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে চাইলে রফিক তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যান। প্রশ্নের মুখে রাশেদুল কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, “তাঁরা তো আগেই ঠিকাদার ছিলেন, আমি তাঁদের দেখে ঠিকাদার বানাইনি।” তিনি গোপন দরপত্র ফাঁসের অভিযোগও অস্বীকার করেন।
অন্যদিকে রফিক বলেন, “আগে কাজ নিতে হলে টাকা দিতে হতো, এখন দিতে হয় না, তাই কাজ করছি।” তিনি স্বীকার করেন, “জরুরি সংস্কারকাজে আগে কাজ শুরু হয়, পরে টেন্ডার হয়।”
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল গোফফার বলেন, “আত্মীয় হলেও নিয়ম মেনে টেন্ডারে অংশ নিতে পারেন। তবে গোপন দর ফাঁস বা কাজের মান নিয়ে যদি অভিযোগ থাকে, সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।”
এরই মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের উপদেষ্টা ও মহাসচিবের কাছে প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।