
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের বিভিন্ন সরকারি অফিসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মরত অনেক কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)-এর ৩৪১ জন কর্মীর মধ্যে অনেকেই পাঁচ মাস ধরে বেতন থেকে বঞ্চিত। এদের একজন হাবিব আহসান (ছদ্মনাম) জানান, “দুই মাস ধরে পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে পারিনি। নিজেই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি।”
একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উল্লাপাড়া ৩০ শয্যা হাসপাতালের কর্মীদের ক্ষেত্রেও। দুই প্রতিষ্ঠানের মোট ২২ জন কর্মী দেড় বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। ভূমি সংস্কার বোর্ডের অধীনে ময়মনসিংহে ৬৯ জন, চাঁদপুরে ৩৪ জন ও কুমিল্লায় ৩৫ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী বছরের পর বছর বেতন বঞ্চিত রয়েছেন। কুমিল্লার কর্মীরা টানা ৮৪ মাস, চাঁদপুরের ৮০ মাস এবং ময়মনসিংহের কর্মীরা ৭১ মাস ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাননি। অথচ এই সময়ে অফিসের সব দৈনন্দিন কাজ তাদের দ্বারাই সম্পন্ন হয়েছে।
বেতন না পাওয়ায় অনেক কর্মচারী চিকিৎসা করাতে পারছেন না, সন্তানদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে, কেউ কেউ ধারদেনায় ডুবে গেছেন। বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ জানিয়েছে, দ্রুত বেতন না পেলে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে। সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “অনেকে এখন তিনবেলা খাবারও জোগাড় করতে পারছেন না। প্রায় সবাই সুদে টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এটি শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এক মানবিক বিপর্যয়।”
জেলা প্রশাসকরা ইতোমধ্যে ভূমি সংস্কার বোর্ডকে চিঠি দিয়ে কর্মচারীদের বেতন প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে বোর্ডের সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অফিস সহায়কদের জন্য আলাদা কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই; তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া অর্থ প্রদান সম্ভব নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা বিষয়টি অবগত এবং ভূমি মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ভূমি সংস্কার বোর্ড যদি চিঠি পাঠায়, তাহলে অর্থ বিভাগ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে কোনো ঠিকাদার না থাকায় এবং নতুন আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ থাকায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে অর্থ বিভাগ সক্রিয় হওয়ায় তারা আশাবাদী, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।