
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা জনগণের কাছ থেকে ফি বা মাশুল নিয়ে নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। এবার এসব সেবার মাশুল নির্ধারণ বা সংশোধনের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, টেকসই বাজেট ব্যবস্থাপনা ও স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে করবহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) এবং নন-এনবিআর কর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে এনবিআর কর ছাড়াও এই দুই উৎস থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আসে। অর্থ বিভাগ জাতীয় রাজস্ব কাঠামোকে শক্তিশালী করতে নীতিগত নির্দেশনা দেয় এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলে। তাই সরকারের যে কোনো আর্থিক বিষয়ে—বিশেষ করে মাশুল, ফি বা রাজস্বসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারির আগে অর্থ বিভাগের মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কিছু মন্ত্রণালয় বা বিভাগ করবহির্ভূত রাজস্ব বা নন-এনবিআর কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অথচ ‘রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬’-এর বিধি ১৩ অনুযায়ী রাজস্বনীতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অর্থ বিভাগের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক। অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনো সেবার ফি বাড়ানো বা কমানো—দুই ক্ষেত্রেই রাজস্ব আয়ের ওপর প্রভাব পড়ে। তাই জাতীয় বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে এসব সিদ্ধান্তের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া জরুরি।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এতে অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৫ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে নন-এনবিআর কর ১৯ হাজার কোটি এবং করবহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) ৪৬ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এনটিআর খাতে আসে লভ্যাংশ ও মুনাফা, সুদ, প্রশাসনিক মাশুল, জরিমানা, ভাড়া, ইজারা, টোল, সেবা বাবদ আয় ও অন্যান্য করবহির্ভূত উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ। অন্যদিকে, নন-এনবিআর করের মধ্যে রয়েছে মাদক শুল্ক, যানবাহন কর, ভূমি রাজস্ব, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রি ও সারচার্জ। চলতি অর্থবছরে স্ট্যাম্প বিক্রি থেকে ১১ হাজার ৮৮৬ কোটি, লভ্যাংশ ও মুনাফা থেকে ১০ হাজার ৭৯১ কোটি, সুদ থেকে ৪ হাজার ৮৯০ কোটি, টোল থেকে ১ হাজার ৭০৯ কোটি এবং ভূমি রাজস্ব থেকে ২ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।