
এসএম বদরুল আলমঃ গুলশানস্থ কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম স্কুল (সিটিএস) এবং মালিবাগ ও ওয়ারীতে অবস্থিত কানাডিয়ান ট্রিলিনিয়াম ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের (সিটিআইএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান পিয়ালের বিরুদ্ধে একাধিক নারী শিক্ষক ও নারী কর্মকর্তাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী কয়েকজন নারী শিক্ষক জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে যোগ্যতা বা মেধার চেয়ে নারীদের প্রতি এমডির ব্যক্তিগত আগ্রহই চাকরি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলে।
স্কুলের স্টাফদের বড় অংশ নারী হওয়ায় কর্মীদের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক নারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতার চাইতে আবেদনকারীর সৌন্দর্য বা “উদার মানসিকতা”কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অভিযোগকারীরা দাবি করেন, যে নারী কর্মী এমডির ব্যক্তিগত চাহিদার কাছে নতিস্বীকার করেন, তাকে উচ্চ বেতন, দ্রুত পদোন্নতি বা অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়। অন্যদিকে কেউ তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে তাকে মানসিকভাবে হয়রানি করা হয়, বেতন কমিয়ে দেওয়া হয় বা কারণ না দেখিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি উদাহরণ টেনে আনেন এক নারী কর্মকর্তা। তার দাবি, পাকিস্তানি নাগরিক আয়েশা নামের এক নারী শিক্ষক সহকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলেও শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। তবুও পরবর্তীতে তিনি ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পান। অভিযোগকারীদের দাবি, তার পদোন্নতির পেছনে এমডির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কই বড় ভূমিকা রাখে। অভিযোগ আরও আছে, আয়েশার স্বামী জিয়া শিক্ষাগতভাবে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তাকে রিক্রুটমেন্ট ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই পরিস্থিতিতে কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা এবং পেশাগত অবমাননার অভিযোগ ওঠে। স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, ভাইস প্রিন্সিপাল আয়েশা এবং এইচআর ম্যানেজার শুভ্রা এমডির হয়ে নারী শিক্ষকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন এবং তাদের ব্যক্তিগতভাবে “ম্যানেজ” করার দায়িত্ব নেন। এতে স্কুলে নারীদের জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ ক্রমেই ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
সম্প্রতি একজন নারী শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে অভিযোগ করেন যে, এমডি মাহমুদুর রহমান তাকে কৌশলে বাসায় ডেকে যৌন হয়রানি করেন। যদিও পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে সেই পোস্টটি মুছে ফেলা হয় বলে অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে এবং আরও কয়েকজন নারী কর্মী তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে শুরু করেন।
নারী কর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতেন না। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি, অনুমোদন ছাড়া বিদেশি শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভেঙে ক্যাম্পাস পরিচালনার অভিযোগও রয়েছে। তবে এসব অভিযোগের কোনো তদন্ত বা আইনি প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে এমডি মাহমুদুর রহমান পিয়ালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নারী শিক্ষক ও কর্মকর্তারা জানান, তারা ন্যায় বিচার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের স্বার্থে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।