
এসএম বদরুল আলমঃ বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিদপ্তর একসময় উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে নির্ভরযোগ্য সংস্থা হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশের সরকারি ভবন নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে এসেছে, কমে গেছে সুনাম ও কার্যক্ষমতা। অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি এবং প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে প্রতিষ্ঠানটি আজ চরম সংকটে নিমজ্জিত বলে অভিযোগ উঠেছে।
তদন্তে জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা কিছু প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গোপনে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন বা বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিদের নামে বেনামে ঠিকাদারি ফার্ম চালিয়ে সরকারি কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এতে প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা ব্যাহত হচ্ছে, আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অর্থ।
এছাড়া ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে কমিশন নেয়ার অভিযোগও পুরনো। তদন্ত টিমের সাথে কথা বলা কয়েকজন ঠিকাদার জানিয়েছেন, কোনো রক্ষণাবেক্ষণ কাজ বা ছোট প্রকল্প পাস করাতে হলে অন্তত ২৭ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন দিতে হয়, যার বড় একটি অংশ প্রকৌশলীদের কাছে যায়। এ ধরনের অনিয়ম এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় প্রভাবশালী রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কাজে লাগিয়ে কিছু নির্বাহী প্রকৌশলী বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ঢাকাকেন্দ্রিক পদে থেকে প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং বদলির নিয়ম ভঙ্গ করে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জোরে স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলানোর সাথে সাথে এসব কর্মকর্তা এখন নিজেদের রঙ বদলে নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ে নিরাপদ থাকার চেষ্টা করছেন।
একাধিক সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির কারণে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। নতুন প্রকল্প কমে গেছে, আগের মতো বড় সরকারি কাজ আর পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। অনেক সরকারি সংস্থা এখন নিজস্ব নির্মাণ ইউনিট তৈরি করে কাজ করছে, যা পূর্বে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হতো।
আমাদের অনুসন্ধানী টিমের কাজ চলছে এবং পর্যায়ক্রমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের বিস্তারিত কার্যক্রম, সম্পদের উৎস এবং প্রভাবশালী নেটওয়ার্ক জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সত্য প্রকাশ পাওয়ার মাধ্যমে একটি জবাবদিহিমূলক পরিবেশ গড়ে উঠবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তর তার পূর্বের মর্যাদা ফিরে পাবে।