
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যাত্রীবান্ধব বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। প্রায় ১২ বছর ধরে এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু এখন সেটি পরিণত হচ্ছে সাধারণ ৪ লেনের সড়কে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিপুল অর্থ অপচয়ের দায় কার, তা তদন্ত করে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
২০১২ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্প শুরু থেকেই নানা জটিলতা ও সমালোচনার মুখে ছিল। নকশায় ত্রুটি, নির্মাণে ধীরগতি, বারবার সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে কাজ এগোয়নি প্রত্যাশা অনুযায়ী। দীর্ঘদিন ধরে চলা অপরিকল্পিত নির্মাণকাজে যানজট ও বায়ুদূষণ বেড়েছে, ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রতিদিনের যাত্রীরা।
বিআরটি প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হলেও এখন সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, শুধুমাত্র বিআরটি বাস চালু রাখলে অন্য লেনে যানজট আরও বাড়বে, তাই প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুবিষয়ক বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন জানিয়েছেন, রাস্তা ও স্টেশনগুলো কিছুটা সংস্কার করে সাধারণ সড়ক হিসেবে খুলে দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে সরকার চাইলে অবকাঠামো ব্যবহার করে আবার বিআরটি চালু করা সম্ভব।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দুর্বলতা নয়, বরং লুটপাটের উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল ও জামানতের অর্থ ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল গুরুতর অনিয়ম। তাঁর মতে, প্রকল্প বাতিলের পরও যারা এভাবে সরকারি অর্থ অপচয় করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা, পরে তা বাড়িয়ে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকায় পৌঁছায়। শেষ সময়ে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হলে পরিকল্পনা কমিশন তা ফেরত দেয়। ১২ বছরের প্রচেষ্টা ও বিপুল অর্থ ব্যয়ের পর এখন সেই প্রকল্পের পরিণতি—একটি সাধারণ চার লেনের রাস্তা, আর অগণিত প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এর জবাবহীন অপচয়।